প্রিন্ট এর তারিখঃ Dec 22, 2024 ইং || প্রকাশের তারিখঃ ১৯ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ইং
প্রসঙ্গ : শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম
মোঃ সহিদুল ইসলাম সুমন
বাংলাদেশের এক দশমাংশ ভু খন্ড পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কথা চিন্তা করলে যে নামটি সবার আগে সামনে আসে তিনি হচ্ছেন শহীদ রাষ্ট্রপতির জিয়াউর রহমান।অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, উন্নয়ন ও ঐতিহ্যের সাথে এই নামটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রাম পুনো গঠনে রাষ্ট্রপতি জিয়ার ভুমিকা অভিস্মরনীয়। রাষ্ট্রপতি জিয়ার ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ১ নং সেক্টর কমান্ডার এবং পরে জেড ফোর্সের প্রধান ,উনার যুদ্ধ ক্ষেত্র ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম। ফলে সেখানকার ইতিহাস, ভূগোল, জনমানস এবং সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলের অস্থিরতা সম্পর্কে ধারণা ছিল সুস্পষ্ট।এবংস্পষ্ট ধারণা থাকার কারণেই প্রেসিডেন্ট জিয়া বুঝতে পেরেছিলেন, পাহাড়ের সংকট সমাধান করতে হলে কী কী করতে হবে। সেই হিসেবে ৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর তিনি ক্ষমতা গ্রহনের পর ঘন ঘন পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করে সেখানকার সামাজিক ও গোষ্ঠি নেতাদের সাথে ধারাবাহিক মিটিং করে স্থানীয় মানুষের সাথে একটা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হন।এর ভিত্তিতে পরবর্তীতে পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলেন।আজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র তার সম্যক ধারণা পেতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বের ইতিহাস জানতে হবে, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ব্রিটিশদের কাছ থেকে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে।পাকিস্তানের অংশ হিসেবে ওইদিন তৎকালীন পূর্ব বঙ্গ (পরে পূর্ব পাকিস্তান), বর্তমান বাংলাদেশের সকল অংশই স্বাধীন হওয়ার কথা। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের (বান্দরবান, রাঙ্গামাটিতে এবং খাগড়াছড়ি) ক্ষেত্রে তা হয়নি। সেখানে তখনো ভারতের পতাকা উড়ছিল। পরে ১৭ আগস্ট পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের গিয়ে ভারতীয় পতাকা নামিয়ে পাকিস্তানের পতাকা উড়াতে হয়েছিল। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, সেই ১৭ আগস্টকে তারা এখনো ‘ব্ল্যাক ডে’ হিসেবে পালন করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে এটা তারা না করলেও কৌশলে ত্রিপুরাতে বসবাসরত চাকমারা বেশ ঘটা করেই পালন করে।
একই কাজ তারা করেছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়েও। রাঙ্গামাটির চাকমা সার্কেল চিফ এবং বান্দরবানের বোমাং সার্কেল চিফ স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপক্ষে গিয়ে যোগ দিয়েছেন পাকিস্তানিদের সঙ্গে। গড়ে তুলেছেন রাজাকার বাহিনী। পাকিস্তানিদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়তে গিয়ে রাঙ্গামাটিতে মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের সবচেয়ে বেশি বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে চাকমা রাজাকারদের কাছ থেকে। পাকিস্তানি হানাদার এবং রাজাকারদের মোকাবিলা করতে গিয়েই নানিয়ারচরে শহীদ হয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ, মহালছড়িতে ক্যাপ্টেন মুশফিকসহ আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা। শুধু তাই নয়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে লুকিয়ে থেকে চাকমা এবং মিজো রাজাকাররা মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে ১৯৭২ সালেও। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরে সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন মাত্র, অন্যদিকে পাহাড়ে তখনো চাকমা এবং মিজো রাজাকারদের বিরুদ্ধে মিত্রবাহিনীকে অপারেশন চালাতে হচ্ছে, এমন সময় আবার পাহাড়ের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে পর পর দুটি দল স্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়ে হাজির হয়েছেন রাজধানীতে।এবং এরপর পাহাড়ের ঘটনার সুত্রপাত ১৯৭২সালের বাংলাদেশে প্রথম সংবিধানে শেখ মুজিবুর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদেরকে বাঙালী হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। ১৯৭২ এর প্রথম সংবিধানে ৬নং ধারায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালী বলিয়া পরিচিত হইবেন। ৯ নং ধারায় বলা হয়, ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন সেই বাঙালী জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।৭২ এর সংবিধানের সকলকে বাঙালী বলে সংজ্ঞায়িত করা হলে পরবর্তীতে উপজাতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং তারা বাঙালী বলে স্বীকার করাকে নিজেদের অস্তিত্ব বিনাশের কারণ হবে বলে মনে করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী জাতীয়তাবাদের বিপরীতে জন্ম নেয় জুম্ম জাতীয়তাবাদ’। ফলে এই নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে তৈরি হয় বিরোধ, যা একসময় গেছে তা সশস্ত্র ধারায়।এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পুরো জাতি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে ব্যস্ত তখন প্রতিবেশী দেশ ভারতের ইন্ধনে ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিজনসংহতি সমিতির এবং এর সহযোগী সংগঠন ও সামরিক শাখা শান্তি বাহিনী নামে গঠন করেন ১৯৭৩ সালেই।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মজিব হত্যাকাণ্ডের পর মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা আত্মগোপনে চলে যান এবং ১৯৭৬ সাল থেকে শান্তি বাহিনী পার্বত্য অঞ্চলে সামরিক অপতৎপরতা শুরু করে। ৭৫ এর ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন জেনারেল জিয়াউর রহমান।এর পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সংবিধানে উল্লেখিত বাঙালী জাতীয়তাবাদকে ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সৃষ্ট বিরোধ নিরসনের লক্ষ্যে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সংশোধিত সংবিধানের ৬ নং ধারার (২) উপধারায় বলা হয়, বাংলাদেশের নাগরিকগণ “বাংলাদেশী” বলিয়া পরিচিত হইবেন। এ সংশোধনের মধ্য দিয়ে বহু অবাঙালী ও উপজাতি বাংলাদেশেরই মানুষ বলে স্বীকৃতি পায়। সেই সাথে সারাদেশের মানুষ জাতি-উপজাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একক রাষ্ট্রীয় পরিচয় লাভ করে। এর মাধ্যমে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রীয় চেতনার বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাষ্ট্র বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশে বহুসংখ্যক বিভিন্ন মতের ও ধর্মের জাতিগোষ্ঠী বাস করে। তাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার মাত্রা ও ধরন বিভিন্ন। তাই জিয়া মনে করেন যে, শুধুমাত্র ভাষা বা সংস্কৃতির ভিত্তিতে নয়, বরং ভূখণ্ডের ভিত্তিতেই জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করা উচিত।
এছাড়াও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রশাসনিক উন্নয়ন ও বিকেন্দ্রীকরণ করে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন, শান্তি, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বহুবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলো স্বাধীনতার পর পর এম এন লারমার নেতৃত্বে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ইন্ধন, ষড়যন্ত্রআশ্রয়-প্রশ্রয় ও সহায়তায় গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও সশস্ত্র শান্তি বাহিনী ততদিনে পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠে।ফলে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র তৎপরতা অব্যাহত রাখে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে সেনাবাহিনী ও নিরস্ত্র বাঙালীদের উপর তাদের সশস্ত্র হামলা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের এক-দশমাংশ ভূ-খন্ডের অস্তিত্ব রক্ষা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশদ্রোহিতা দমন, শান্তি বাহিনীর ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাস দমনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বত্র সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনী মোতায়েন করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনএর সাথে সাথে প্রশাসনিক উন্নয়ন ও বিকেন্দ্রীকরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের লামা, কাপ্তাই ও খাগড়াছড়ি থানাকে মহকুমায় উন্নত করেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে থানার সংখ্যা ১২টি থেকে বাড়িয়ে ২০টিতে উন্নীত করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া পাহাড়ের মানুষের উন্নয়নের জন্য সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি করেন, শিক্ষার উন্নতির জন্য বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন, তিনি পাহাড়ের পতিত জমি লিজ প্রথা চালুর মাধ্যমে রাবার বাগান ও হর্টিকালচার সৃষ্টি করে উৎপাদনের আওতায় আনেন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার সময় বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় প্রতিটি ২৫ একর করে ২০০০টি রাবার ও হটিকালচার বাগানের জন্য ভূমি লিজ দেওয়া হয় দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অনাবাদী জমিকে আবাদের আওতায় আনার জন্য সমতলের ভূমিহীন, গৃহহীন ও ভাসমান ছিন্নমূল গরীবদের পাহাড়ে পুনর্বাসন করেন।
এখনা উল্ল্যেখ যে সে সময় পাহাড়ের কতিপয় নেতা প্রেসিডেন্ট জিয়ার কাছেও স্বায়ত্তশাসনের দাবিনামা পেশ করেছিলেন। আবার একই সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারতের মদদ এবং সহযোগিতায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা অব্যাহত রাখে।ঠিক তখনি তখন তার প্রতিকারে সমতল থেকে নদী ভাঙ্গা বেশকিছু পরিবারকে পাহাড়ে পুনর্বাসন করেন জিয়াউর রহমান, যারা একদিকে পাহাড়ের বিস্তীর্ণ অনাবাদী ভূমিকে চাষের আওতায় আনে, অন্যদিকে দেশের অখ-তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অন্যতম ভিত্তি হয়ে উঠে। পাশাপাশি সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে ঢেলে সাজান তিনি। এর ফলে রাষ্ট্রকে চাপ দিয়ে দাবি আদায়ে জেএসএসের অপকৌশল বুমেরাং হয়ে যায়। একই সময় জেএসএসের সভাপতি এম এন লারমার ছোট ভাই শান্তিবাহিনীর ফিল্ড কমান্ডার সন্তু লারমাকে আটক করা হয়। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের কৌশল হিসেবে প্রথমে সন্তু লারমার স্ত্রীকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তার পারিবারিক আর্থিক অনটন দূর করা হয়। পরবর্তীতে শান্তি আলোচনার স্বার্থে সন্তু লারমাকেও মুক্তি দেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। কিন্তু মুক্তি পেয়ে কথা রাখেননি সন্তু লারমা, তিনি আবার ফিরে যান জঙ্গলে।
রাষ্ট্রপতি জিয়া তার সময় চাকমা রাণী বিনীতা রায়কে পার্বত্য উপদেষ্টা ও বান্দরবানের বোমাং সার্কেল চিফ অংশৈই প্রু চৌধুরীকে খাদ্য প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত করেনশহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া পাহাড়ি নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করে ট্রাইবাল কনভেনশন গঠন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান সমস্যাকে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ও অর্থনৈতিক সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন।এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ব্যাপক সামাজিক উন্নয়ন শুরু করেন। তিনি তার সময়ে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ায় বতর্মানে পাহাড়ের জনগণ এর সুফল ভোগ করছে।পার্বত্য চট্টগ্রামে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ও গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিয়ে আজ যারা প্রশ্ন তুলছেন, তাদের এদেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আস্থা বা বিশ্বাস আছে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।বিশেষ করে, সংবিধানে ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ প্রতিস্থাপন এবং পাহাড়ে বাঙালি পুনর্বাসন যে পার্বত্য সংকট সমাধানের পথে সবচেয়ে দূরদর্শী, সুদূরপ্রসারী এবং তাৎপর্যময় পদক্ষেপ, সেটা বহু গবেষক স্বীকার করেছেন। এমনকি বাঙালি পুনর্বাসন এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ জেএসএসের চাপ দিয়ে দাবি আদায়ের কৌশলকে গুড়িয়ে দিয়েছিল সেটা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির অনেক গবেষকও তাদের লেখায় উল্লেখ করেছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কৌশল ছিল ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর রণ-তূর্য’ এবং তাতে তিনি সফলভাবে শান্তিবাহিনী এবং ভারতের ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য যে, পরবর্তী শাসকরা সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। ভারতের চাপে তারা সমস্যার মোকাবিলায় শুধু ‘বাঁশরী’ বাজিয়ে গেছেন, কিন্তু ‘রণ-তূর্যে’র কথা বেমালুম থেকেছেন। ফলে সরকারগুলো যত ছাড় দিয়েছে শান্তিবাহিনী তত তাদের চেপে ধরেছে।
পরবর্তীতে ১৯৮১ সালের ৩০ মে কতিপয় বিপথগামী সৈনিকের হাতে শাহাদাত বরন করেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যার কারণে পার্বত্য সমস্যার ইতি টানা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সংবিধান পরিপন্থী ও বৈষম্যমূলক স্থানীয় সরকার পরিষদ (যা পরবর্তীতে পার্বত্য জেলা পরিষদ নামে পরিচিত) সৃষ্টি করে পাহাড়ে জাতিগত বৈষম্যের বিষ বৃক্ষ রোপণ করেন, যার ধারাবাহিকতা এখনও চলমান। সরকারের ভুল নীতির সুযোগ নিয়ে তারা প্রথমে জেলা পরিষদ আদায় করেছে। পরে ১৯৯৭ সালে তথাতকথিত শান্তি চুক্তি আদায় করেছে, সেই চুক্তির আলোকে অসাংবিধানিকভাবে জেলা পরিষদের কর্তৃত্ব বাড়িয়ে নিয়েছে, আঞ্চলিক পরিষদ আদায় করেছে, ভূমিকমিশন আদায় করেছে, ভূমিকমিশন আইন আদায় করেছে। এমন আরো বহু বিষয় আদায় করেছে। চুক্তির ৭২টি ধারা-উপধারা মধ্যে ইতোমধ্যে ৬৫টি ধারা বাস্তবায়ন করে নিয়েছে। কিন্তু চুক্তিতে তাদের নিজেদের জন্য মান্য একমাত্র ধারা ‘অস্ত্র সমর্পণ’ তারা বাস্তবায়ন করেনি। কিছু অস্ত্র জমাদানের নাটক করলেও বাস্তবে চুক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জেএসএস আগের চেয়ে আরো ভয়ঙ্কর এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রের মজুত বাড়িয়ে চলেছ।যার কারনে পাহাড়ে এখনও শান্তির সুবাতাস আসেনি। এমনকি আজকে তিন পার্বত্য জেলায় যে ছয়টি সন্ত্রাসী সশস্ত্র সংগঠন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তার কোন টায় বিএনপি র আমলে তৈরী হয়নি, সবকটি প্রতিবেশী দেশের ইন্ধনে শেখ মজিব ও তার কন্যা শেখ হাসিনার আমালে তৈরী হয়েছে। শেখ মুজিবের আমালে গঠিত শান্তি বাহিনীই আজকে বিভিন্ন ধারা উপধারায় বিভক্ত হয়ে ছয়টি গ্রুপে উপনিত হয়েছে। যার আগুনে প্রতিনিয়ত জ্বলছে পাহাড়ের সাধারন মানুষ । পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মানুষজন এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, প্রেসিডেন্ট জিয়া আরো ২ থেকে ৩ বছর সময় পেলে পাহাড়ের এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে সক্ষম হতেন।বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব যতদিন অটুট থাকবে পার্বত্য চট্টগ্রামে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যুগান্তকারী ও দূরদর্শী ভূমিকার কথাও ততদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কেননা, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের একক জাতিগত ও সাংবিধানিক পরিচয় দিয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
তবে সেই ৪৭ ও ৭১ ভারতীয় ও পাকিস্থানি পতাকা উত্তোলনকারীদের উত্তরসূরিরা এখনো পাহাড়ে সক্রিয় আছে এবং সম্প্রতি এর সাথে যোগ হয়েছে জুলাই’২৪ আন্দোলনের পরাজিত স্বৈরাচার আওয়ামী ফ্যাসিষ্টরা। তাই দেশ ও দেশের সার্বোভোমত্ব নিয়ে এখনও ষড়যন্ত্র চলেছে,এর জন্য আজকে যারা পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে তারা হয়তো অনেক আগেই সফল হতো, যদি শহীদ জিয়া সে সময় এসব সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ না নিতেন। পাহাড়ের মানুষ বিশ্বাস ও প্রত্যাশা করে আগামী দিনে পার্বত্য সমস্যার সমাধানে তারুণ্যের অহংকার ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বোভৌমত্বের অতন্ত্র প্রহরী জনাব তারেক রহমান এ দেশের জনগণের মেন্ডেট নিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন এবং সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে সকল সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্থায়ী সমাধান বের করবেন।
লেখক : লেখক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক।